আজ পবিত্র রমজান মাসে ফিতরার দাম নির্ধারণ ও ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে সে বিষয়ে একটি সচেতনতা মূলক পোস্ট লিখলাম।

আলহামদুলিল্লাহ, আজ আমি ঈদুল ফিতরের ফিতরাহ নিয়ে আপনাদের কাছে  ছোট একটি আলোচনা করতে যাচ্ছি, যা আপনদের একটি জ্ঞান এবং সচেতনতা মূলক পোস্ট হিসেবে ধরে নিতে পারেন। আজ কোন ভূমিকা, রঙ-রস ছাড়া অনেকটা সাদামাটা ভাবে ফিতরার কিছু বিষয় তুলে ধরা হবে আপনাদের কাছে এখানে। আর আপনাদের মধ্যে হয়তো এতেই পড়ে জেনে বুঝে সাড়া দিবে কোন সচেতন বিবেকবান, ইন শা আল্লাহ্...


আপনারা জানেন অন্যান্য সকল বছরের ন্যায় এবারও চলতি বছরে ফিতরার দাম নির্ধারীত হয়েছে। ফিতরার দাম যাই হউক সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ – তা নির্ধারীত হয়ে থাকে মূল কিছু ইসলামিক নির্দেশনার উপর এটি ভিত্তি করে। তাই এ বিষয়ে আপনাদের কিছু জানা খুব প্রয়োজন।

এই ফিতরা বা সদাকাতুল ফিতর এর বিষয়বস্তুকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

ক) কি দিয়ে আদায় করতে হবে মানে আপনি কোন জিনিস দিয়ে ফিতরা আদায় করবেন ? যেমনঃ আটা, টাকা, খেজুর, চাল, যব ইত্যাদি। 

খ) কাদের হাতে এই ফিতরার জিনিস দিতে হবে বা কাদের প্রাপ্য?

গ) ফিতরা কে দিবে মানে কোন ব্যক্তি এই ফিতরা জিনিস দিবে?


ক)আপনার অবশ্যই জেনে রাখা দরকার সদাকাতুল ফিতর ৪ টি জিনিস দিয়ে আদায় করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।। তা হলো –

১। পনির

২। কিশমিশ

৩। খেজুর

৪। জব বা আটা


বিশ্ব নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) প্রত্যেক মুসলমান উম্মত সে স্বাধীন-ক্রীতদাস, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় যেই হোক সবার উপর  যাকাতুল ফিতর বা ফিতরা ফরজ করেছেন: এক সা’ পরিমাণ খেজুর কিংবা যব। মানুষ ঈদের নামাযে বের হওয়ার আগেই তিনি তা আদায় করার আদেশ দিয়েছেন।[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম, ভাষ্যটি সহিহ বুখারীর]


তাহলে আপনি বুঝেন খাদ্যদ্রব্যের পরিবর্তে এই মূল্য নির্ধারণের প্রবণতাটি কি সুন্নাহ্ পরিপন্থি নয়? আর যদিও তা শর্ত সাপেক্ষে বৈধ করি তবুও কেন আমরা উত্তম আমল আদায় করার চেষ্টা করবো না?


খ) কাদের ফিতরা দিতে হবে বা কাদের জন্য প্রাপ্য?

দেখুন পবিত্র কুরআন মাজিদে, ১০ নং পারা, সুরা আত তাওবাহ এবং ৬০ নং আয়াত। ৮ টি খাত বর্ণিত আছে। এই ৮ জায়গাতে আপনি দিতে পারবেন। যথা-

১.ফক্বীরঃ নিঃসম্বল ভিক্ষাপ্রার্থী যে ভিক্ষা করে খায়,

২.মিসকীনঃ আপনি জানেন যে ব্যক্তি নিজের প্রয়োজন মিটাতেও পারে না, মুখ ফুটে চাইতেও পারে না। বাহির থেকে তাকে সচ্ছল বলেই মনে হয়।

৩.আমেলীনঃ এই যাকাত আদায়ের জন্য নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ।

৪.ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট কোন ব্যক্তিগণ। কোন অমুসলিমদেরকে ইসলামে দিকে দাখিল করাবার জন্য এই খাতটি নির্দিষ্ট।

৫. দাসমুক্তির জন্যঃ এই খাত বর্তমানে নাই বলে চলে । তবে অনেকে অসহায় কয়েদী মুক্তিকে এই খাতের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করেছেন (কুরতুবী),

৬.ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিঃ যে ব্যক্তির সম্পদের তুলনায় ঋণের অংক বেশী। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তির ঋণ থাকে ও তার সম্পদ না থাকে, এমতাবস্থায় সে ফক্বীর ও ঋণগ্রস্ত দু’টি খাতের হকদার হবে।

৭.ফী-সাবীলিল্লাহ বা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা।

৮. দুস্থ মুসাফির বা পথের মধ্যে কোন কারণবশতঃ পদ ভুলে শূন্য হয়ে পড়লে সেই পথিকগণ এই খাত হ’তে সাহায্য পাবেন। যদিও তিনি তার নিজ দেশে বা বাড়ীতে সম্পদশালী হন।


গ) ফির রাত ও ঈদের দিনে যার কাছে তার নিজের ও তার দায়িত্বে যাদের পোষণ অর্পিত তাদের খাদ্যের অতিরিক্ত এক সা’ বা তদুর্ধ পরিমাণ খাবার থাকে তার উপর সদাকাতুল ফিতর ফরয।


আজ আমাদের দিকে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন সমাজের যে অবস্থা তাতে খুব অল্প সংখ্যক লোকই সাদকাতুল ফিতরার যোগ্য হবে। এখন যদি কেউ এই হুকুমের বাহিরে এসে কোন ব্যক্তি তা গ্রহণের প্রবণতা দেখায় তা কখনোই শরীয়াসম্মত হবে না। তাই এই বিষয়ে গ্রহীতা ও দাতা উভয়কে আরো সচেতন হতে হবে। না হলে পুরো বিষয়টাই আমার মতে গোলাটে হয়ে যাবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url