শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহারের নিয়ম

ছেলে মেয়ে উভয় চায় তাদের মাথার চুল সিল্কি নরম সুন্দর হোক। সে জন্য তারা মাথার চুল যত্ন নিতে বিভিন্ন শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করে থাকেন। এমনকি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুলকে সিল্কি নরম সুন্দর রাখতে মাথায় শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করা খুবই জরুরি। এটি ব্যবহারের পরে চুলকে চকচকে রাখে। তবে আপনাদের অবশ্য মনে রাখতে হবে কন্ডিশনার ব্যবহারের কিছু নিয়ম ও নীতি রয়েছে। আপনি যদি ব্যবহার সম্পর্কে না জানেন তবে এটি ব্যবহারের ফলে আপনার চুলের কোন উপকার করবে না, বরং এটি ক্ষতির কারণ হতে পারে ।

তাহলে জেনে নিন-

১) আপনি চুলের গোড়ায় কন্ডিশনার ভুলেও লাগাবেন না। কারণ চুলের গোড়া থেকে এমনিতেই প্রাকৃতিক তেল তৈরি হয়। আবার সেখানে কন্ডিশনার লাগালে চুলের গোড়া থেকে যে প্রাকৃতিক তেল তৈরি হয় তা বাধা গ্রস্ত হবে। আপনি যদি চুলের গোড়ায় কন্ডিশনার লাগান তাহলে চুল অনেক বেশি তৈলাক্ত হয়ে যাবে। তাই চুলের মাঝের অংশ থেকে কন্ডিশনার লাগানো শুরু করুন।

২) আপনি এটা মনে করবেন না যে চুলে বেশি কন্ডিশনার লাগালে আপনার চুল সিল্কি হয়ে যাবে। কারণ অতিরিক্ত কন্ডিশনার ব্যবহার করলে আপনার চুল আঠালো হয়ে যেতে পারে। আবার আপনি কম কন্ডিশনার চুলে লাগালে তা ঠিকমত কাজ করতে নাও পারে । সে জন্য ভালো ফল পেতে চুলের ঘনত্ব ও ধরন অনুযায়ী কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।

৩) আপনার চুলে কন্ডিশনার লাগানোর পর তা সাথে সাথে চুল ধুয়ে ফেলবেন না কারণ তাতে আপনি কন্ডিশনারটির ফলা ফল পাবেন না। তাই চুলে কন্ডিশনার লাগিয়ে অন্তত ৪ থেকে ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। গভীর কন্ডিশনার জন্য, এটি ১৫ মিনিটের জন্য অপেক্ষা করুন । তবে এই ক্ষেত্রে, আপনাকে অবশ্যই শাওয়ার ক্যাপ পরতে হবে।

শ্যাম্পু ব্যবহারের নিয়ম

শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহারের নিয়ম

আমরা শ্যাম্পু সম্পর্কে যতটা জানি , আমরা কন্ডিশনার নিয়ে তত জানি না । তাই এখন থেকে এসবের বিষয়ে ভালো ভাবে জেনে নিন। যার ফলে এ গুলো ব্যবহারে আপনার চুলকে দারুণ দেখাবে।

আপনার চুল ছোট হোক বা লম্বা, তা পরিষ্কার রাখতে নিয়মিত শ্যাম্পু করা প্রয়োজন। চুল ভেজালে শ্যাম্পু করলে এবং ফেনা অপসারণ করলে চুল পরিষ্কার হবে না। চুল পরিষ্কার করার জন্য সঠিক শ্যাম্পু করা প্রয়োজন এবং একই সাথে চুলকে সুস্থ রাখতে হবে ।

  1. প্রথমে আপনার মাথার চুলের ধরন অনুযায়ী শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার বেছে নিতে হবে। আপনার চুল শুষ্ক, তৈলাক্ত বা সংমিশ্রণ কিনা তার উপর ভিত্তি করে শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার নির্বাচন করুন।
  2. আপনি মাথায় শ্যাম্পু করার আগে চুল ভালো করে আঁচড়ে নিন।
  3. এরপর পুরো চুল ভালো করে পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে।
  4. ঘনত্ব কমাতে একটি পাত্রে শ্যাম্পুর সঙ্গে সামান্য পানি মিশিয়ে নিন যাতে তা সহজেই চুলের গোড়ায় পৌঁছে যায়।
  5. মাথায় শ্যাম্পু লাগানোর পর ১৫ মিনিটের জন্য আপনার আঙ্গুল দিয়ে মাথার ত্বকে আলতোভাবে ম্যাসাজ করুন। এতে রক্ত ​​সঞ্চালন বাড়বে, যা চুলের গোড়া মজবুত করবে। তা ছাড়া চুলের ময়লা বেরিয়ে যাবে।
  6. এবার অল্প পরিমাণ পানি দিয়ে চুলে ম্যাসাজ করুন।
  7. সবশেষে ভালো করে আপনার চুল ধুয়ে নিন।

এর পরে, দ্বিতীয় বার পূর্নরায় চুলে শ্যাম্পু করা উচিত। তবে মনে রাখবেন প্রথম বারের মত মালিশ করবেন না। কারণ, ম্যাসাজের ফলে আপনার  চুলের গোড়া থেকে সিবাম নামক এক ধরনের তেল বের হয়,যার ফলে চুলে শ্যাম্পু করে কোনো লাভ নেই। এই নিয়মে মাথার চুলে দুইবার শ্যাম্পু ব্যাবহার করতে হবে।

পানি দিয়ে মাথার চুল ধুয়ে ফেলার পরে, কন্ডিশনার ব্যবহার করার সময় এসেছে। চুলে কন্ডিশনার লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। মোটা তোয়ালে জড়িয়ে প্রথমে চুল থেকে পানি ছেঁকে নিন। তারপর হেয়ার ড্রায়ার বা পাখা দিয়ে চুল শুকিয়ে নিন যা ঠান্ডা বাতাস বয়ে যায়।

শ্যাম্পু ব্যবহার করার সময় যে কাজ করবেন না 

আপনারা অনেকেই চুলে শ্যাম্পু করার আগে চুলে তেল লাগান, যদিও এটা কোনো সমস্যা নয়,তবে মনে রাখবেন নোংরা চুলে তেল লাগানো যাবে না।

  1. আপনি চুল ভালোভাবে না ভিজিয়ে সরাসরি শ্যাম্পু করবেন না।
  2. চুলে শুধু ঘষাঘষি করে ময়লা পরিষ্কার করার চেষ্টা করা সঠিক পদ্ধতি নয়।
  3. কন্ডিশনার শুধুমাত্র শ্যাম্পু ব্যবহার করা পরে চুলে লাগানো উচিত, শুরুতে নয়। এর কাজ চুল নরম করা। এটি গোড়ায় লাগালে চুলের গোড়া নরম হবে।
  4. চুল ধোয়ার পর তোয়ালে দিয়ে ভালোভাবে ঘষবেন না।
  5. চুল শুকানোর জন্য তোয়ালে দিয়ে হালকা ভাবে মুছে ফেলতে হবে যাতে আপনার চুল সহজেই শুকায়।
  6. আপনি ভেজা চুল আঁচড়াবেন না।

কন্ডিশনার ব্যবহারের সঠিক নিয়ম

শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহারের নিয়ম

আপনার সিল্কি এবং স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য, শ্যাম্পু করার পরে একটি কন্ডিশনার ব্যবহার করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে কন্ডিশনার ব্যবহারের কিছু নিয়ম রয়েছে। আপনি যদি তাদের অনুসরণ না করেন, তাহলে আপনি কোনো লাভ করতে পারবেন না। জেনে নিন কন্ডিশনার ব্যবহারের সঠিক নিয়ম কী কী।

মাথায় শ্যাম্পু করার পর চুল থেকে অতিরিক্ত পানি ঝেড়ে ফেলুন। এজন্য আপনি একটি তোয়ালে দিয়ে অতিরিক্ত জল মুছে ফেলতে পারেন।

এরপর আপনার হাতে অল্প পরিমাণে কন্ডিশনার নিন এবং উভয় তালুতে ছড়িয়ে দিন এবং তারপর এটি আপনার চুলে লাগান। তবে মনে রাখবেন চুলের গোড়ায় কন্ডিশনার লাগাবেন না।

আপনার আঙ্গুল দিয়ে উপরে থেকে নীচে ভালো ভাবে হালকা করে ম্যাসেজ করুন। তবে এ জন্য মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়েও আঁচড়াতে পারেন। এতে কন্ডিশনার পুরো চুলে সঠিকভাবে পৌঁছাতে পারবে।

  1. আপনি এবার ২ থেকে ৩ মিনিট অপেক্ষা করুন।
  2. এবার একটু সময় নিয়ে চুল আবার ধুয়ে ফেলুন।
  3. কন্ডিশনার সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা

আমরা অনেকেই মনে করি কন্ডিশনার চুলকে তৈলাক্ত করে। তবে এটা আমাদের একেবারেই ভুল ধারণা । কন্ডিশনার শুধু  চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।

আমাদের মধ্যে অনেকেই চুলের গোড়ায় কন্ডিশনার লাগাই । এটা কোন ভাবেই ঠিক নয়। সারা চুলে কন্ডিশনার লাগান। বরং চুলের গোড়ায় না লাগানোই ভালো।

আমাদের অনেকেই আবার মনে করেন কন্ডিশনার চুল পড়া বন্ধ করে। মনে রাখবেন এটাও একটা ভুল ধারণা। কন্ডিশনার চুল পড়া রোধ করে না এটির ব্যাবহারের ফলে চুল সিল্কি এবং সুন্দর হয়।

কিভাবে কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত?

শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহারের নিয়ম

সাধারণভাবে, এটি ব্যবহার করা সহজ বলে মনে হয়, তবে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ না করা হলে, কন্ডিশনারটি সঠিকভাবে কাজ করবে না।

  1. চুলের গোড়ায় কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন না।
  2. চুলের গোড়ায় কন্ডিশন ব্যবহার করা সবচেয়ে সাধারণ ভুল।
  3. কন্ডিশনার ব্যবহার করার সময়, এটি শুধুমাত্র কোথায় ব্যবহার করা হয় তা নয় বরং এটি কীভাবে ব্যবহার করা হয় সেদিকেও সতর্ক হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

হেয়ার কসমেটিকস ব্র্যান্ড সাশাহুয়ানের ডিরেক্টর ট্রে গিলেন বলেন, "আপনাকে দুই হাতের তালুতে কন্ডিশনার নিয়ে চুলে লাগাতে হবে এবং খিয়াল রাখবেন কোনোভাবেই যাতে চুলের গোড়ায় কন্ডিশনার না লাগে । জট, ক্ষতিগ্রস্ত এবং চাপযুক্ত চুলের জায়গায় ভালো কন্ডিশনার লাগান।"

চুলে সঠিকভাবে কন্ডিশনার লাগানোর জন্য প্রথমে কন্ডিশনার লাগান এবং চওড়া দাঁতের চিরুনি বা আঙ্গুল দিয়ে আচরে নিন । কন্ডিশনার ব্যবহার করার পরে, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। 

সঠিকভাবে শোষিত হয় না

আবার কেউ কেউ কন্ডিশনার ব্যবহার করার সাথে সাথে এটি ধুয়ে ফেলে কিন্তু না আপনি সাথে সাথে ধুয়ে ফেলবেন না কমপক্ষে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন।

চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করার পরে এটি চুল দ্বারা শোষিত হওয়ার জন্য কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।

সঠিক উপায়ে কন্ডিশনার ব্যবহার করলে চুলে লক্ষণীয় পার্থক্য দেখা যায়।

বেশী বা কম ব্যবহার 

"কিছু লোক চুল ধোয়ার পরে খুব কম বা খুব বেশি কন্ডিশনার ব্যবহার করে," ক্লিভল্যান্ড বলে। যদি আপনার চুল ধোয়ার পরে ভারী মনে হয়, আপনি খুব বেশি কন্ডিশনার ব্যবহার করেছেন এবং যদি এটি শুষ্ক মনে হয়, আপনি খুব কম ব্যবহার করেছেন। "

চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করার জন্য আদর্শ পরিমাণ হল দুটি মুদ্রা।

আপনার চুলে কন্ডিশনার লাগান এবং আঙ্গুল দিয়ে চিরুনি করুন, এটি সারা চুলে ছড়িয়ে পড়বে। তবে যাদের পাতলা এবং সিল্কি চুল তাদের প্রতিবার কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত নয়।

আপনি আরও পড়তে পারেনঃ

  1. রংপুর কোন খাবারের জন্য বিখ্যাত
  2. গাইবান্ধা জেলার বিখ্যাত খাবার
  3. ভালোবাসার কষ্টের গল্প কাহিনী
  4. অনলাইন জব মোবাইল
  5. স্মার্ট টিভিতে কি কি করা যায়

কোন কন্ডিশনার ভালো

বাজারে অনেক ধরনের কন্ডিশনার পাওয়া যায় এবং সঠিকটি বেছে নেওয়া বেশ কঠিন।

"সিলিকন" এবং "ডাইমেথিকোন" সাধারণত সস্তা কন্ডিশনারগুলিতে ব্যবহৃত হয়। এগুলো চুলকে চকচকে ও নরম করে এবং চুলকে স্বাস্থ্যকর করে তোলে। কিন্তু এই কৃত্রিম উপাদানগুলো চুলের জন্য মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়,” ক্লিভল্যান্ড সতর্ক করে।

পরিবর্তে, জোজোবা, নারকেল এবং আরগান তেলের মতো প্রাকৃতিক তেল সমৃদ্ধ পণ্য ব্যবহার করা উপকারী। যাইহোক, অতিরিক্ত তেল চুল ভারী এবং নিস্তেজ করতে পারে, তাই সাবধানতার সাথে ব্যবহার করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url